অনেক দিন আগের কথা। বাংলাদেশের ছোট্ট একটি গ্রামে ছিল সবুজ মাঠ, বয়ে চলা নদী আর শান্ত এক পরিবেশ। গ্রামের নাম ছিল শান্তিপুর। এই গ্রামের মানুষগুলো ছিল খুবই সহজ সরল। তারা সবাই মিলেমিশে থাকত আর একে অপরের বিপদে আপদে এগিয়ে আসত।
শান্তিপুরের পাশ দিয়ে বয়ে যেত তিতাস নদী। এই নদী ছিল গ্রামের মানুষের জীবনের একটি অংশ। জেলেরা মাছ ধরত, কৃষকেরা জমিতে সেচের কাজ করত আর শিশুরা নদীতে সাঁতার কাটত। নদীর ধারে ছিল বিশাল এক বটগাছ। এই গাছটি ছিল গ্রামের সবচেয়ে পুরনো গাছ। গ্রামের লোকেরা বলত, এই গাছের নিচে নাকি অনেক আত্মা বাস করে।
একদিন গ্রামের বাজারে এক নতুন লোক এলো। তার নাম ছিল জামাল। জামাল দেখতে বেশ অদ্ভুত ছিল। তার চোখগুলো ছিল খুব তীক্ষ্ণ আর মুখে সবসময় একটা রহস্যময় হাসি লেগে থাকত। গ্রামের লোকেরা তাকে একটু ভয় পেত। জামাল গ্রামে এসে একটি ছোট দোকান খুলল। সেই দোকানে সে নানা রকম অদ্ভুত জিনিস বিক্রি করত।
কিছুদিন পর থেকে গ্রামে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করল। রাতে মানুষের ঘরের জিনিসপত্র চুরি হতে লাগল, গরু-ছাগল হারিয়ে যেতে লাগল আর নদীর ধারে রাতে অদ্ভুত আলো দেখা যেতে লাগল। গ্রামের লোকেরা ভয় পেয়ে গেল। তারা ভাবল, নিশ্চয়ই কোনও অশুভ আত্মা গ্রামে এসেছে।
গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ দাদুভাই বললেন, "আমাদের এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। না হলে আমাদের গ্রাম আর শান্ত থাকবে না।" সবাই মিলে ঠিক করল, তারা জামালকে জিজ্ঞাসা করবে। জামাল সবকিছু শুনে একটু হাসল। তারপর বলল, "আমি জানি, এই সব কিছুর পেছনে কে আছে। কিন্তু আমি একা কিছু করতে পারব না। তোমাদের সাহায্য লাগবে।"
সবাই রাজি হয়ে গেল। জামাল তাদের নিয়ে রাতে নদীর ধারে গেল। সেখানে গিয়ে তারা দেখল, এক অদ্ভুত প্রাণী নদীর পানিতে নেমে কিছু খুঁজছে। প্রাণীটি দেখতে অনেকটা মানুষের মতো, কিন্তু তার চোখগুলো জ্বলছিল আর গায়ে আঁশ ছিল। জামাল বলল, "এই হল জলরাক্ষস। এ-ই সব কিছু চুরি করছে।"
গ্রামের লোকেরা ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু জামাল তাদের সাহস জোগাল। সে বলল, "আমাদের ভয় পেলে চলবে না। আমাদের বুদ্ধি খাটিয়ে একে হারাতে হবে।" জামাল তাদের কিছু পরিকল্পনা বলল। সেই মতো কাজ করে তারা জলরাক্ষসকে একটি জালে আটকাতে সক্ষম হল।
জলরাক্ষস ধরা পড়ার পর গ্রামের সব কিছু আবার শান্ত হয়ে গেল। মানুষজন খুব খুশি হল। তারা জামালকে ধন্যবাদ জানাল। জামাল বলল, "আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে, তাহলে কোনো বিপদই আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।"
এরপর থেকে শান্তিপুরের মানুষজন আরও ঐক্যবদ্ধ হল। তারা বুঝল, সাহস আর বুদ্ধি দিয়ে সব বিপদ মোকাবিলা করা যায়। জামালও গ্রামের মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে সেখানেই থেকে গেল। গ্রামের পাশে বয়ে চলা তিতাস নদী যেমন শান্ত ছিল, তেমনই শান্তিতে ভরে উঠল শান্তিপুর গ্রাম।
0 Comments