সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি: এক দশকের যুদ্ধের পর বাস্তবতা
প্রায় দেড় দশক ধরে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং বৈশ্বিক সংকটের আবর্তে সিরিয়া আজও শান্তির মুখ দেখতে পারেনি। ২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউয়ে বাশার আল-আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তা দ্রুতই রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে। এর মধ্যে উঠে আসে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠন, বিদেশি হস্তক্ষেপ এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গোষ্ঠীর সংঘর্ষ।
রাজনৈতিক অবস্থা
বর্তমানে বাশার আল-আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দেশের প্রায় ৬৫-৭০ শতাংশ এলাকা। বাকি অংশ কুর্দিশ বাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির নিয়ন্ত্রণে। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে সিরিয়ার সরকারের বৈধতা এখনো রাশিয়া, ইরান এবং চীন সমর্থন করে আসছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন মূলত কুর্দিশ নেতৃত্বাধীন SDF (Syrian Democratic Forces) এবং কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দিকে।
মানবিক সংকট
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার ২ কোটিরও বেশি মানুষ মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল। খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্যসেবা এবং আশ্রয়ের অভাবে লাখ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। সিরিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসপ্রায়, মুদ্রাস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী এবং বেকারত্বের হার ৫০ শতাংশের বেশি। সিরিয়ার অভ্যন্তরে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ এবং দেশের বাইরে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ৬০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
সিরিয়ার ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও যুদ্ধের জটিলতা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। রাশিয়া এবং ইরান সিরিয়ার সরকারের প্রধান সমর্থক, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক এবং ইসরায়েল আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয়। ২০২৪-২৫ সালে ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকবার সামরিক সংঘর্ষ হয়েছে। তুরস্কও সীমান্তবর্তী এলাকা নিরাপদ রাখতে সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন রেখেছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে সিরিয়ার পূর্ণ শান্তি ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না। কারণ দেশটিতে জাতিগত, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিভাজন গভীর। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা এবং রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সিরিয়ার সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তাছাড়া যুদ্ধপরবর্তী পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হবে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।
0 Comments